বিএনপি যদি আবারো ক্ষমতায় আসে, তারা দেশের অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনদের জন্য সম্মানী ভাতা প্রদানের পরিকল্পনা করছে বলে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানিয়েছেন। রোববার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত ইমাম-খতিব জাতীয় সম্মেলনে তিনি এ কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের সব ইমাম-খতিব ও মুয়াজ্জিনরা সমাজের মূল সংস্কারক। তারা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধির জন্য কাজ করে চলেছেন। এ কারণেই এই পেশার মানুষরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই মহান কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের আর্থিক সঙ্গতিসহায়তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মনে করে বিএনপি। তিনি জানান, মাসে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ অর্থ একে জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচনী বছরে (ফেব্রুয়ারি) এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের কথা ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী করার জন্য ‘ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট’ কে শক্তিশালী করে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি বলেন। তারেক রহমান উপস্থিত আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ধর্মীয় জ্ঞান সাধারণ মানুষ থেকে অনেক বেশি। একজন মুসলমান ও রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ইসলাম সম্পর্কে মৌলিক বিশ্বাসগুলো– তা হলো তওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত—অবশ্যই বিশ্বাস থাকতে হবে। এছাড়া, কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত—এগুলি ইসলামের মূল স্তম্ভ। এই মূলনীতিগুলোর মধ্যে কোনো আপোস থাকে না। ইসলামি ঐক্য সবার মধ্যে দৃঢ়, তবে ধর্মীয় বিষয়ের রাজনৈতিক ব্যবহার কিংবা ভিন্নমত মাঝে মাঝে মতবিরোধ তৈরি করে। তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ইসলামের সকল বিধান অনুসরণে কোনো বাধা নেই। তবে ধর্মীয় ইস্যুতে বিভ্রান্তি বা ভিন্নমত সৃষ্টি করে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি না করতে নেতা-ওলামাদের সর্তক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিএনপি এক শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে বিশ্বাসী, যেখানে সব মানুষ নিরাপদে নিজেদের ধর্ম পালন করতে পারবে। বিএনপি কখনোই ইসলামের মূল নীতিগুলোর সঙ্গে আপস করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না বলে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন তিনি। তারেক রহমান স্মরণ করিয়ে দেন, স্বৈরাচারী শাসকরা স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেনি। তবে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এটি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। বর্তমানে কেন সেটি আর থাকছে না, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিএনপি সব সময়ই ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরের গণহত্যা ও অন্য ইস্যুতে দলটি একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নেয়। মূলত, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উন্নতির জন্য ২০০৬ সালে তাদের ড предмет দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল মনে করেন তিনি। বর্তমানে দেশে মোট ৫০ হাজারের বেশি মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ ছাত্র পড়াশোনা করছে। দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাদানে এসব কার্যক্রমের বাইরে থাকা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতা বিবেচনায় বিএনপি পরবর্তী পরিকল্পনায় এগিয়ে এসেছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করেন, যার মধ্যে ইমাম-খতিব ও মুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল প্রণয়নের বিষয়টি অন্যতম। তিনি বলেন, অনেক মসজিদে নিয়োগের বিষয়টি মসজিদ কমিটির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে, যা অযৌক্তিক। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এই সার্ভিস রুল কার্যকর করবে। অন্যান্য দাবিগুলোরও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকারের সময় প্রথম মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ভবিষ্যতে দুর্যোগ মোকাবিলা ও উন্নয়নের নানা উদ্যোগে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি শেষালে বলেন, ইমান, ইসলাম আর দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় দরকার ঐক্য। আগামী জোটের জন্য তিনি বলেন, ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যের ধারাবাহিকতা অবলম্বন করে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য রাখবে বিএনপি। সবশেষে তিনি দেশের সম্মানিত ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনদের দোয়া, সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন।
Leave a Reply